‘সব দেশকে ছাপিয়ে আরও আলোকিত হওয়ার মধ্যে আমেরিকার মহত্ত্ব নেই। বরং আমেরিকার মাহাত্ম্য হলো, ভুল শোধরানোর সক্ষমতা তার আছে।’ বলা হয়ে থাকে, এমন মন্তব্য করেছিলেন প্রখ্যাত ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলেক্সি টকভিল। কিন্তু এ কথার সত্যতা মিলল না এবারও। ভুল শোধরাতে শিখলে কি আবার নির্বাচনী সহিংসতা সৃষ্টি হতো? একদিকে জো বাইডেন সব গুছিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন নতুন বছরে দেশকে এবং সম্ভবত বিশ্বকেও, নতুন নেতৃত্ব উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু হেরেও ‘জিতবই জিতব’ বলে ভুয়াধ্বনি তুলে সমর্থকদের সহিংসতায় উসকে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে, কেউই-বা নিশ্চিত করে বলতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা সেই ১৫০ বছর আগেকার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে না। ১৮৫৫ সালের ৬ আগস্ট, কেন্টাকির লুইসভিলে স্থানীয় নির্বাচনের দিন উগ্রবাদী ‘কিচ্ছু জানি না’ (নো নাথিং) পার্টি আর ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকদের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষে ২২ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। আমরা এরই মধ্যে ‘কৃত্রিম শহর’, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের সমর্থনে বড় বিক্ষোভ হতে দেখেছি।
বিক্ষোভের আগুন জর্জিয়াতেও আঁচ করা গেছে, যে রাজ্যে ১৯৯২ সালের পর এবারই প্রথম হারল রিপাবলিকান পার্টি। এমনকি এসব বিক্ষোভ চলাকালেই ট্রাম্পকে, অনেকটা জাতস্বভাবেই, টুইটারে উসকানি দিতে দেখা গেছে এই বলে যে, ‘এখনো অনেক খেলা বাকি। আমরা জিতবই। আমরাই জিতব।’ গত শনিবার এমন বিক্ষোভে ট্রাম্প সমর্থকরা বিরোধীদলীয় সমর্থকদের ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণও করেছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন নেতা বাক্যে ও ঘোষণায় নিজে সতর্ক না হলে এ সহিংসতা যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। ‘সভ্য’ দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সুনামে সুনামি ডেকে আনতে পারে এমন নির্বাচনোত্তর সহিংসতা।
৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ক্ষমতাসীন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ডেমোক্র্যাট নেতা বাইডেন। ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ৩০৬টি পেয়েছেন সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। ষোলো সালের নির্বাচনের ঠিক উল্টো ফল। সেবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২৩২ ভোটে আটকে গিয়েছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
২০১৬ সালের নির্বাচনেও আমরা দেখেছিলাম, প্রচারকালে ট্রাম্প এ কথা স্বীকার করতে রাজি হননি যে, ফল যা-ই হোক তিনি মেনে নেবেন। এবং সেবারও তার সমর্থকরা হিলারির সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। সেবারও ট্রাম্প সহিংসতার আগুনে ঘি ঢালতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। যেমন তিনি বলেছেন, কোনো সমর্থক যদি তার সমালোচকদের ওপর চড়াও হয়, দাঁত ভেঙে দেয়, তা হলে জরিমানা যা লাগে তিনি তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
বেলজিয়ামভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে, ট্রাম্প যেভাবে ‘বিষভাষ্য’ ছড়াচ্ছেন এবং ‘ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে যেভাবে সহিংসতায় উসকানি’ দিচ্ছেন, তা আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্টকে এমনটা করতে দেখা যায়নি।
Leave a Reply